ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫ | ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১
Logo
logo

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসন: বন্দি ছিল গণতন্ত্র ও মানবাধিকার


আব্দুল্লাহ আল মাসুম   প্রকাশিত:  ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ১১:০৮ এএম

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসন: বন্দি ছিল গণতন্ত্র ও মানবাধিকার

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসন নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। তার শাসনামলে তথাকথিত উন্নয়ন হলেও বিরোধীরা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। স্বৈরশাসক হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে পাচার হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। তার শাসনামলে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে সমালোচকরা মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধী দল দমন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের শিকার হয়েছেন। স্বৈরশাসক হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। ১৬ বছরের শাসন নিয়ে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, যা বাংলাদেশি রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

স্বৈরশাসক হাসিনার ১৬ বছরের শাসনে গণতন্ত্রের চরম অবনতি হয়েছে। জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই। বিরোধী দলের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। 

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি হয়েছে। ভোটারদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ফলাফল প্রভাবিত করতে ভোট কেটে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছিল ব্যাপক।

  • ভোটারদের হুমকি
  • ভোট কেটে নেওয়া
  • স্বচ্ছতার অভাব

বিরোধী দলের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের কার্যকলাপ ব্যাহত হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে। বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

  1. গ্রেফতার ও নির্যাতন
  2. মিথ্যা মামলা
  3. গণমাধ্যমের উপর চাপ
বিষয় পরিস্থিতি
নির্বাচন  : কারচুপির অভিযোগ
বিরোধী দল  : নির্যাতন ও গ্রেফতার
গণমাধ্যম  : স্বাধীনতার অভাব

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার শাসনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে। মানবাধিকার হলো মানুষের মৌলিক অধিকার। এটি ব্যক্তির স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে। কিন্তু, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।

মিডিয়ার স্বাধীনতা বাংলাদেশে খুবই সংকুচিত। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। সরকার মিডিয়ার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ফলে, জনগণ সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সাংবাদিকদের উপর হামলাহয়রানি বাড়ছে। অনেক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে মিডিয়ার স্বাধীনতা আরও কমে গেছে।

গত ১৬ বছরে গুমবিচারবহির্ভূত হত্যা বেড়েছে। অনেক মানুষ হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। তাদের কোনও সন্ধান পাওয়া যায় না। কিছু মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের হত্যাকাণ্ড মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি বড় উদাহরণ।

  • গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ভয় ও আতঙ্কে থাকে।
  • বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলি ন্যায়বিচার পায় না।

এই ঘটনা গুলো সমাজে ভয় ও অনিরাপত্তার সৃষ্টি করে।

আর্থিক দুর্নীতি শেখ হাসিনার শাসনামলে একটি গুরুতর সমস্যা। তার শাসনের ১৬ বছরে বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা প্রকট হয়েছে। এই দুর্নীতির ফলে দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে।

  • পদ্মা সেতু প্রকল্প: এই প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
  • রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: এই প্রকল্পেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
  • মেট্রোরেল প্রকল্প: এই প্রকল্পে বিশাল অংকের টাকা আত্মসাত হয়েছে।

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাংকিং খাতে কেলেঙ্কারি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই দুর্নীতির ফলে দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা কমেছে। তারা ব্যাংকিং সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

  1. হলমার্ক কেলেঙ্কারি: প্রায় ৪০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
  2. বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি: এই ব্যাংকে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
  3. জনতা ব্যাংক কেলেঙ্কারি: এখানে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

 

স্বৈরশাসক হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের প্রধান একটি দিক হলো বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ। বিচার ব্যবস্থা হলো গণতন্ত্রের একটি মূল স্তম্ভ। কিন্তু এই সময়ে বিচার বিভাগে ব্যাপক হস্তক্ষেপ হয়েছে। বিচারকদের উপর চাপ, বিচারিক প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক ব্যবহার সবই এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তাঁদের উপর প্রশাসনিক চাপ থাকে। অনেক বিচারক রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হন।

  • বিচারকদের পদোন্নতি বা বদলি রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়।
  • মামলার রায় দেওয়ার সময় চাপ সৃষ্টি করা হয়।
  • স্বাধীনভাবে রায় দিলে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়।

বিচার ব্যবস্থা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এই পরিস্থিতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছে। সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পায় না।

তারিখ -  মামলার বিবরণ -  রাজনৈতিক প্রভাব
২০১০  : বিরোধী দলের নেতার গ্রেফতার  : সরকারি নির্দেশে
২০১৫  : বিরোধী দলের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা  : নির্বাচনের আগে

 

স্বৈরশাসক হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের মধ্যে শিক্ষা খাতে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি চমকপ্রদ। এ দুর্নীতি শিক্ষার মান কমিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক দুর্নীতি বড় সমস্যা। অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়। যোগ্য প্রার্থীরা সুযোগ পায় না।

তালিকাভুক্ত কিছু দুর্নীতি:

  • চাকরি নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ
  • অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তন
  • প্রকল্পে অর্থ অপব্যবহার

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি ও সহিংসতা উদ্বেগজনক। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলি ত্রাস তৈরি করে।

বিষয় -  প্রভাব
ছাত্র রাজনীতি  : শিক্ষা পরিবেশ নষ্ট হয়
সহিংসতা  : শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়

এগুলো শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। ফলে তারা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সংকট একটি গুরুতর সমস্যা। স্বৈরশাসক হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এই খাতে যথেষ্ট উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা খাতে দুর্নীতি ও অপব্যবহার সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করছে। স্বাস্থ্যসেবার মান দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদেরও সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। রোগীরা ঠিকমত চিকিৎসা পাচ্ছে না।

  • সরঞ্জামের অভাব: হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।
  • ডাক্তারের অভাব: পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই।
  • চিকিৎসার মান: মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে কর্তৃত্বের অপব্যবহার চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন পদে অনিয়মিত নিয়োগ হচ্ছে। সরকারি তহবিলের অপব্যবহার হয়েছে।

সমস্যা -  প্রভাব
অনিয়মিত নিয়োগ  : সুবিধাবঞ্চিত চিকিৎসকরা নিয়োগ পাচ্ছে না।
তহবিলের অপব্যবহার  : সেবা উন্নয়নে তহবিল ব্যবহার হচ্ছে না।

এই সংকটের ফলে দেশের সাধারণ মানুষ মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে অবিলম্বে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

স্বৈরশাসক হাসিনার ১৬ বছরের শাসনকালে পরিবেশের অবনতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই সময়ে বন ও নদীর দখল বেড়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণে উদাসীনতা দেখা গেছে। ফলে জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব পড়েছে। বন ও নদী দখল স্বৈরশাসক হাসিনার শাসনকালে একটি বড় সমস্যা। সরকারি কর্মকর্তাদের মদদে বন ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়েছে। নদীগুলো দখল হয়ে গেছে। নদীগুলোর প্রবাহ কমে গেছে। এই দখলদারির ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারের উদাসীনতা স্পষ্ট। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বন ধ্বংস, নদী দখল, আবর্জনার সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকা, ইত্যাদি সমস্যা থেকে বোঝা যায়। পরিবেশ সংরক্ষণে উদাসীনতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। বায়ু দূষণ বেড়েছে, যা মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলেছে।

সমস্যা -  পরিণাম
বন ধ্বংস  : বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট
নদী দখল  : জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে
উদাসীনতা  : জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত

পরিবেশের অবনতি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগ নয়, জনগণের সহযোগিতাও প্রয়োজন।

স্বৈরশাসক হাসিনার ১৬ বছরের শাসনকালে সামাজিক অবক্ষয় একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে সমাজের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে। প্রতিদিন পত্রিকায় এমন খবর পাওয়া যায়। নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এই সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। সরকারের পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট কার্যকর নয়। অপরাধীরা শাস্তি পায় না। সামাজিক মূল্যবোধের অবনতির প্রধান কারণ নৈতিকতার অভাব। মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনৈতিক পথে যাচ্ছে।

  • অন্যের প্রতি সম্মানবোধ কমেছে।
  • বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রতি সহানুভূতি কমে গেছে।
  • অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা এর অন্যতম কারণ। শিক্ষার মান কমেছে। শিক্ষার সঙ্গে নৈতিকতা শেখানো হচ্ছে না।

সমস্যা -  কারণ -  প্রভাব
নারী ও শিশু নির্যাতন  : আইনের দুর্বলতা  : নিরাপত্তাহীনতা
সামাজিক মূল্যবোধের অবনতি  : নৈতিকতার অভাব  : সমাজের অবক্ষয়

স্বৈরশাসক হাসিনার শাসনকালে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সমাজে মানবিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

স্বৈরাচার হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের বিশ্লেষণ আমাদের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের মতামত ও প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করা উচিত। ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পরিবর্তনের জন্য সঠিক নেতৃত্ব প্রয়োজন। দেশের সুশাসন নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জনগণের স্বার্থে নেতৃবৃন্দকে জবাবদিহি করতে হবে।